বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১১

গনিতের উপসংহার

১)

- আরেকটু ভাত নে
- আম্মা, পেট ভরসে তো! আর খামুনা।
- পইত্যেকটা দিন তুই না খায়া ঘুমায় থাওস। তুই ইস্কুল করস, নেহাপড়া করস। না খাইলে শইলে যুত পাইবি কেম্বে?
- খাইসি আম্মা, তুমি খায়া আমার কাসে আহো। মাতায় খুশকি হইসে, বাইচ্ছা দেও ।
প্রচন্ড খিদে নিয়ে খালি পেটে কাথার নীচে আশ্রয় নেয় সাজু। এটা নতুন কিছু নয়। বাটিতে যেইটুকু ভাত আছে, তা অনেকের খাওয়ার পর হাত ধোয়ার সাথেই চলে যায়। মা কি খাবে তাহলে? খিদে পেট নিয়ে ঘুমুতে অবশ্য তার খারাপ লাগেনা, খিদে পেটে ঘুমালে অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখা যায়!

সাজু’র ভালো নাম সাজ্জাদুল আলম। তার বাবা আইদ্যা (আহাদ আলী ) ঢাকাতে ৬-সি নম্বর লোকাল বাসের হেল্পার। মা মানুষের বাসায় ২ বেলা কাজ করে, পেশায় যাকে বলে ছুটা বুয়া। দুটো পেট চালানোর জন্য তাকে রীতিমত ছুটতেই হয় সারাটাদিন।

২)

নিধুপাড়া হাই স্কুলে, অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র সাজু। সাধারণত হত দরীদ্র পরিবারের ছেলেরা যেমন অতি মেধাবী হয়, চমক লাগানো রেজাল্ট করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় , সাজু সেরকম না। ক্লাসে সে বরাবরের মতোই সাধারণ মানের ছাত্র। প্রতি বছরই তাকে বিবেচনায় উত্তীর্ন হিসেবে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হয়, কেননা প্রতি বছরই সে দুইটি বিষয়ে ফেল করে। শারীরিক শিক্ষা আর সামাজিক বিজ্ঞান। গণিতে সে পায় ৫০ কি ৫৫। শুনে গাধা মনে হলেও, সমস্যাটা এখানেই! স্কুলের স্যারেরা তাকে ডাকে পীঠা সাজূ নামে! সাজু যেই অংকই করুক না কেনো, সে জ্যামিতি দিয়ে সেটা করে ফেলে! সে বীজ গনিত হোক আর পাটিগনিত! আর তাই, ছোটো ছোটো চার লাইনের উৎপাদকের সমস্যা সে সমাধান করে চার পাঁচ পৃষ্ঠায়। বেশীর ভাগ ব্যাপার সেপার যায় স্যারের মাথার উপর দিয়ে, তাই নাম্বার পাওয়াটা তার জন্য তাল গাছ থেকে তাল পাড়ার মতো।

৩)

অল্প কয়টা কাচা চুল, আর পুরা মাথার চুল সাদা লোকটার। বিশাল একখান গোফ, হাসিটা ঢেকে না দিয়ে বরং আরো বেশী দেখায়। কিন্তু তার হাসি এখন আসছেনা। মারাত্মক চিন্তায় আছে সে আর তার সাথে আরো ২ জন। তার সাথে আছে একজন মারাত্মক খাটুনি তপস্বী মানুষ। তারও গোফ আছে, তবে অতটা সুকেশী নয়। বাকি যে একজন, তার মুখের বুলিটা বিদেশী, কিন্তু অন্তরটা লাল সবুজে ভরা। এই ৩টা মানুষ যখন তাদের চুল ছিড়ে ফেলছে দেশের পোলাপানদের দুরবস্থা নিয়ে তখন সাজু তার বার্ষিক পরীক্ষার অংক খাতা কুচি কুচি করে ছিড়ে পুকুরে ফেলে দিচ্ছে।

৪)

- কানে যায়না কি বলছি? অংক আর বিজ্ঞান মিলিয়ে ১২০ পেলে সায়েন্স পাবে, নাইলে কমার্স আর নাইলে আর্টস। যা ফুট! সকাল থেকে ঘ্যান ঘ্যান করতেসে!
- স্যার, খোদার কিড়া লাগে স্যার। মন দিয়া পড়বো স্যার এখন থেইকা। আর জীবনে কোনোদিন বইয়ের বাইরে কিচ্ছু লিখবোনা।
- লিখবানা কেনো? তুমি তো বিরাট পন্ডিত মানুষ! অত্র নিধুপাড়া অঞ্ছলে তোমার মতো জ্ঞ্যানতপস্বীর বড়ই অভাব! তুমি চার লাইনে পীথাগোরাসের উপপাদ্য লিখবা আর অন্যেরা ৪ পৃষ্ঠা লাগিয়ে ৩বার চিত্র আকিবে, সমান নম্বর পাইতে চাও? কি শখ! যেনো দুলাভাইএর বাড়ির আবদার! বাইর হও!
- স্যার, পায়ে পরি স্যার। বিজ্ঞানে ৭২ পাইসি স্যার, অংকে আর ২টা নাম্বার দিলে স্যার সায়েন্স পড়তে পারমু স্যার। আম্মার বড় শখ, আমি বিজ্ঞানি হমু স্যার। স্যার দয়া করেন স্যার!
- এ? কি কইলি? বিজ্ঞানী? ওই কে কই আছিস রে! আমারে ধর! হাসতে হাসতে নাড়িভুড়ি গিট্টু লাইগা গেছে! হা হা হা। বিজ্ঞানী !! হা হা হা............... তো বাবা, আপনি কি আবিষ্কার করিবেন? নিউটন হইবা? আইনিশটাইন হইবা?

স্যার খুব বাজে ভাবে হাসতে লাগলো। দীর্ঘদিনের না মাজা অপরিষ্কার দাঁতের গন্ধে তার বমি আসতে লাগলো। সে শেষবারের মতো বললো-
- স্যার, আপনি যা চান, আমি তাই করবো। শুধু সায়েন্সে পড়ার একটা সুযোগ দেন।
- ( গলা নামিয়ে) এই মাসের মইধ্যে আমারে ১৫টা টিউশনি আইনা দিবি। যদি পারিস তাইলে তোরে সায়েন্স দিবাম পারি!
সাজু নিরুপায় হয়ে রাজী হয়ে গেলো।

৫)

বাড়িতে ফিরে সাজু তার বাবাকে দেখতে পেলো। বাবাকে সে যমের মতো ভয় পায়। বাবা তাকে এখনো দেখেনি। সে খুব মনযোগের সাথে তার গোফ-দাড়িতে চিরুনী চালাচ্ছে। আম্মা তাকে দেখে ডাক দিলো।
- সাজু, তোর বাপে আইসে, কাসে আয়!
- জে মা, আসি।
সাজু তার বাবা’র পাশে এসে বসলো। তার বাবা তাকে দেখে একটা হাসি দিলেন, হাসির ঝলকে সাজুর মুখ শুকিয়ে শুকনা কিসমিসের মতো হয়ে গেলো।
রাতে শোবার আগে সাজুর বাবা সাজুকে ডাক দিলো।
- তোর পড়াশুনার কি অবস্থা?
- জি ভালা
- ভালা মানে কি? নতুন কেলাসে উঠসোস?
- জি উঠসি। নতুন বইও পাইসি।
- ছাইঞ্ছ নাকি কমাশ?
- সাইন্স আব্বা।
- ডাকটর হইতে না পারলে পিঠের ছাল তুইলা ফালামু হারামজাদা! হারাদিন মালিবাগ,বাংলামটর,ফারমগেট,আগারগাও কইতে কইতে মুখে ফেনা জমায়া হেই টেকা দিয়া তোরে পড়াই। তোর মায় মাইনষের বাসায় কামলা খাইটা তোরে খাওয়ায়। তাও যদি শুনি, নেহাপড়া করস না, কীড়া কাইট্টা কইলাম, এক্কারে জবাই দিমু! যা, অহন ঘুমাইতে যা! আমি কাইলকা সকালে যামুগা। নতুন কেলাসে ভর্তির টেকা দিয়া গেসি, তোর মা’র থেইক্কা লয়া লবি।
- জি আচ্ছা।
ভয়ে সাজুর আত্মা পানি হয়ে গেছে! তার বাবা যখনই তাকে বকে, তখনি তার প্রচন্ড পিশাব ধরে। এখনো তাই। সে এক দৌড়ে ঝোপে গেলো।

৬)

- আমার মনে অয় যে সবার আগে সবচেয়ে বড় বড় গুন , ভাগ করতে পারবো, হেগো লইয়া দৌড়াদৌড়ি করবো।
- আমার মনে অয় মশাল হাতে লইয়া সুত্র মুখস্ত কইতে অইবো আর দৌড়ান লাগবো।
বাজারে পোস্টার দেখে সবার মনে একটাই প্রশ্ন, “ গনিত অলিম্পিয়াড” আবার কি জিনিস? পোস্টারটাও আজব!

π কি করে পাই?
শুন্য জোড় নাকি বেজোড়?
আরো হাবিজাবি বেশ কিছু লিখা ছিলো, কয়েকটা কার্টুনও ছিলো। সাজু পোস্টার দেখে শুধু এতোটুকুই বুঝলো, শুক্রবারদিন ইশকুলের মাঠে সকালে থাকা লাগবে।

৭)

এই ২-৩দিনের মধ্যে মোটামুটি সবাই জেনে গেছে যে শুক্রবারদিন একটা অংক পরীক্ষা হবে। যারা পাশ করবে তাদের সোনার মেডেল দিবে আর ঢাকায় ঘুরতে নিয়ে যাবে। ঢাকায় যাবে, এফডিসিতে শাকিব খান , অপু বিশ্বাসকে দেখতে পারবে, এই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে শ’খানেক পোলাপান শুক্রবার ইশকুল মাঠে হাজির হলো। বেলুন উড়ানো, ঘন্টাখানেক লাইনে দাড় করায় রাখার কারণে বেশ কিছু পোলাপান চলে গেছে।

একটু পরেই সাদা ঝাকরা চুলওয়ালা এক লোক, তার সাথে হাশিখুশী একজন ভদ্রমহিলা আর একজন মোটাসোটা গোফওয়ালা লোক, পতাকা উড়িয়ে হাততালি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন। এরপর লাইন করে সবাই ক্লাসে যেতে লাগলো।

সাজু’র কাছে অংকের আলাদা কোনো বই নেই। তাই গতকাল রাত পর্যন্ত শুধু বোর্ড বইয়ের অনুশীলনী ছাড়াও যে পৃষ্ঠা গুলো ছিলো, সেগুলা বুঝে বুঝে দেখে এসেছে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা!

৮)
দেড় ঘন্টা পর কেক, জুস আর সার্টিফিকেট হাতে পোলাপান বের হয়ে আসলো। মুখ শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। এইগুলা কি? অংক পরীক্ষা দিতে এসেছে অথচ বই থেকে কোনো অংকই দেয় নাই! ফাইজলামী নাকি! ধরে বাড়ির সামনের কালা পুকুরে চুবানো উচিত!

সাজু ৪টা অংক করতে পেরেছে। বাকিগুলা সে ধরারই সুযোগ পাইনি। এত্তো কঠিন অংক বানায় কারা? ভেবে কোনো কুল-কিনারা পায় না সাজু।

৯)

প্রশ্ন শুনে সাদা চুল ওয়ালা লোকটার মুখের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো, কেমন হা করে তাকিয়ে রইল সে সাজুর দিকে!
- কোন ক্লাসে পড় তুমি?
- নাইনে।
তিনি তার পাশের লম্বা , সাদা দাড়িওয়ালা লোকটার সাথে চুপেচাপে আলাপ করতে লাগলো। প্রশ্নটা কঠিন কিছু না, কিন্তু ঢাকা থেকে ৩৫০ মাইল দূরে, বিদ্যুৎ যেই গ্রামে এখনো পৌছায়নি, সেই গ্রামের মাত্র নাইনে পড়ুয়া একটি ছেলের মুখে কোয়ান্টাম ইঙ্গেলমেন্ট এর প্রশ্ন শুনে সবাই ভেবাচেকা খেয়ে গেলো! তবে, সাজু নিজেও জানেনা তার প্রশ্নটা যে কোয়ান্টাম ইঙ্গেলমেন্ট নিয়ে। প্রশ্নটা ছিলো অনেকটা এরকম-
“ আমরা বইয়ে পড়সি যে, পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকার গুলার ১টা হলো ইলেক্ট্রন। এগুলা নাকি জোড়ায় জোড়ায় থাকে। আবার এরা উলটা হয়ে ঘুরতে থাকে। একটা ডানদিকে ঘুরলে আরেকটা বাম দিকে ঘুরে। যদি আমি একটাকে ধইরা উলটা দিকে ঘুরায় দেই, তাইলে কি হইবে? “

সাজুকে ২-৩জন প্রশ্নের উত্তরটা বোঝানোর বেশ চেষ্টা করলো, কিন্তু সে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে বুঝতে পারলোনা। শেষে বাধ্য হয়ে সে হাসিমুখে বললো, “ স্যার, আমি বুজছি!” তাকে ডেকে একটা বই দেয়া হলো, ছবিও তুললো উনাদের সাথে।


১০)

লজ্জায় সে কাদতে পারছেনা, কিন্তু ব্যাথায় তার বুক ফেটে কান্না আসছে। বাবা তাকে হাত-পা ছাড়াও শরীরের এমন সব জায়গায় মেরেছে যা বলার মতোনা। পড়াশুনা বাদ দিয়ে অংক নিয়ে দৌড়ানোর উৎসবে গিয়েছে শুনে তাকে বড়ইগাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে ছাল তুলে ফেলেছে। ৩টা অংক করে সে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাকে মেডেল আর সার্টিফিকেট দিয়ে ঢাকায় ক্যাম্প করার জন্য দাওয়াত দিয়েছে- এই কথা শুনে তার বাবা ভাত খাওয়া থেকে উঠিয়ে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়েছে। তার মা হাত পা ডলে দিচ্ছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
- আমারে কইয়া গেলিনা ক্যা? জানস না তোর বাফে কেমন? আমারে কইয়া গেলে তো তোরে যাইবার দিতাম না।
- আমি কি একা গেসি আম্মা? আর অংক করন কি খারাফ?
- বইয়ের অংক না কইরা তুই গেসস খেলার অংক করতে। এই অংক কি তোরে ভাত দিব?
এরপর আর কি বলার আছে? প্রচন্ড ব্যাথা নিয়েই সে ঘুমাতে লাগলো। স্বপ্ন দেখতে লাগলো। দেখলো, “ওই ঝাকরা সাদা চুলের লোকটা আর মোটাসোটা গোফওয়ালা লোকটার হাত ধরে সে শিশুপার্কে যাচ্ছে। শিশু পার্কে বিশাল বড় বড় সব ত্রিভুজ! বিভিন্ন রঙের ত্রিভুজ! কোনোটা লম্বা, কোনোটা বেটে, কোনোটা আবার হাসে, কথা বলে! একটা লোক আসলো, তার মাথাটা একটা সমবাহু ত্রিভুজের মতো, এসে তাকে সোনার মেডেল পড়িয়ে দিলো। আকাশটাও কেমন তিন কোনা। দুনিয়া তার কাছে তিন কোনা লাগতে লাগলো।“

১১)



দোকানের শাটার নামিয়ে সাজু হাটতে লাগলো। বাম হাতে গজ দশেক তার, পকেটে প্লাস, পেরেক আর ডান হাতে ড্রিল মেশিন নিয়ে সাজু কাস্টমারের বাসায় যাচ্ছে। যাওয়ার সময় দেখলো, কারওয়ান বাজারে একটা বিল্ডিং এর নীচে বিশাল লাইন। এরা সবাই গনিত অলিম্পিয়াডের জন্য নাম লিখাতে এসেছে। খুব গোপনে সে চোখের পানি মুছে নিলো যাতে কেউ না দেখে। আট বছর আগের সেই গোলাকার মেডেলটা এখনো তাকে অনেক কাঁদায়।
(এই গল্পটা হিমুর ছায়া অবলম্বনে লিখবো বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু লিখার পর দেখলাম কোনোভাবেই হিমু ছাড়া এটা কম্পলিট করা সম্ভব না। তাই হিমুর নামেই লিখলাম। জনাব হুমায়ুন আহমেদ স্যার, আমি আপনার অনেক বেশী বড় ভক্ত, আমি হিমুকে বিকৃত করার জন্য নয়, বরং ভালোবেসে লিখেছি। দয়া করে এই গল্প না পড়লেও, কেউ বললে বা স্বপ্নে দেখলেও ক্ষমা করে দিবেন।)


১)


ওয়াক থু !!!

বেইলীরোডের এই ডাস্টবিনটা সৃষ্টির আদি থেকে দেখতে দেখতে বড় হয়েও এর সাথে অভ্যস্ত হতে পারে্নি হিমু। হেল্ভেশিয়ার নীচে আজও তাই তার পেটে পাক দিয়ে উঠে পঁচা কাঠাল আর ডাল মাখানো পচা ভাতের গন্ধে । হিমু’র বাবা মৃত বলে হিমু কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল।জাগতিক সকল কিছুর প্রতি আসক্তি দুরীকরনের জন্য হিমুকে বিশেষভাবে ট্রেনিং যেমন দেয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি সকল ঘৃন্য বস্তুর প্রতিও কৃত্রিম তবে আবেগময় ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলার জন্য ট্রেনিং দেয়াতেন। হিমু নিশ্চিত, আজকে বাবা থাকলে তাকে এই ময়লা ও মাছি যুক্ত পঁচা কাঠাল ভাতের নলার মতো করে খেতে হতো।

পিছন থেকে কোন বলদ (বলদিনীও হতে পারে) যেনো হঠাৎ করে দু’ চোখে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো – “বলতো কে?” চোখে হাত দিলে কিভাবে বলবো তুই কে ! বলদ নাকি !!

- “আপনি হিমুর খালা, মাজেদা খালা“ । বলে হিমু ফিরে তাকালো।
- ও মা! এই ছেরা, তুই কে?
- আমি হিমু।
- ফাইজলামী করিস? এক চটকানা দিয়ে তোর কলিজা খুলে ফেলবো! হিমু কই?
- আমিই হিমু!
- তাইলে আমি কে?
- আপনি হিমুর খালা!
- আমার ভাইগ্না কই?
- খালা! আপনি ভুল করেছেন। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের সব হিমু তো এক না! একেক বইয়ে একেক হিমুকে নিয়ে লিখে। এটা বুঝেন না কেনো? এই বার আমাকে নিয়ে লিখেছেন।
- আমার ভাইগনাকে খুজে বের কর, নাইলে হিমুর খালুকে ডেকে তোকে হাজতে ভরবো। তুই আমার সাথে রসিকতা করিস? কোথাকার কোন হনুমান আহমেদ না কি, সে আবার কারে নিয়া কি বালের গল্প লিখে। আমারে শুনাস সেই কথা!
অবস্থা বেশী খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে দেখে হিমু বললো – “খালা, আমি টেলিপ্যাথিক উপায়ে “হলুদ হিমু কালো র্যাব” উপন্যাসের হিমু ভাইকে আপনার কথা বলেছি। উনি আজ সন্ধ্যায় আপনার সাথে টিএসসিতে দেখা করবেন বলেছেন।

- এত্তো কিছু বুঝিনা। তুই আগে পাঞ্জাবী খোল। এটার আমার ভাইগনার ট্রেডমার্ক করা পাঞ্জাবী।

হিমু খুলি বলেই দিলো দৌড়। এক দৌড়ে ভিকারুন্নিসার সামনে !

“এই দেখ দেখ! ওই যে হিমু !!”
“ওয়াও!! হাউ হ্যান্ডসাম !!! পুররা রানবীর কাপুরের মতো চক্লেট বয় !”
হিমু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলো, পিছন থেকে হঠাৎ কে যেনো কদম্বুসি করা শুরু করে দিলো।
- হিমু ভাই, পা টা তুলেন, কাদা লাগছে, পইষ্কার কইরা দেই।
- হোই মিয়া! আমার পা ধরছো, সাহস তো কম না! জানো, আমি কে? আমার খালুরে চেনো?
- হিমু ভাই, আমি মইত্যা!! মইত্যা ভিডিউ!! চিনছেন?
- ও, কেমন আছো মইত্যা? তোমার ভিডিউ এর ব্যাবসা কেমন চলে?
- ওইডি বাদ দিয়া দিছি, আমি এই দিক দিয়া কলেজের মাইয়াগো ভিডিউ ক্লিপ বাইর করি, ওই দিক দিয়া আমার বৌ এর ৪টা সিডি বাইর হয়া গেসে ।
- বাহ! তো ডিভিডি নাকি ভিসিডি? ব্লু প্রিন্ট থাকলে দিও তো !
- হিমু ভাই, আপনেও? আমি এইসব ছাইড়া দিসি। এখন হিন্দী সিরিয়ালের ব্যাবসা করি। মাইয়ারা এইডা ভালা খায় !
- তাই নাকি? কোন দিক দিয়া খায় ?
বলেই হিমু বুঝলো কথাটা অশ্লীল হয়ে গিয়েছে। তাও আবার , মেয়েদের কলেজের সামনে দাড়ানোই এখন টাফ ব্যাপার, পুলিশ থাকে অলটাইম। টু-পাই এক্সট্রা কামাই করনের জন্য লুঙ্গী-জাঙ্গীয়া কাছা বেধে এখন এরা ইভ-টিজিঙ্গের বিরুদ্ধে নেমেছে।


২)
মইত্যা হিমুকে নিয়ে কেএফসিতে ঢুকলো। সে কী দৃশ্য রে বাবা! হাটু প্রদর্শঙ্কারী লাল ফর্সা
মেয়েগুলা কি সুন্দর করে যে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে চিকেন খাচ্ছে, এ এক অভূতপুর্ব দৃশ্য! মলয় চৌধুরী এই দৃশ্য দেখলে কি লিখতেন ভেবেই হিমু আতিপাতি করে টয়লেট খুজতে লাগলো !

“এই হিমু !“
- কেমন আছো তিতির?
- ভালো। তুমি, তাও এইখানে? হুমায়ুন আহমেদ কি হিমু লিখার ফরম্যাট ভুলে গেছে নাকি!! তুমি থাকবে রাস্তায় রাস্তায়, ফকিরদের সাথে কাঙ্গালী-ভোজ খাবে। এইখানে তুমি, অবিশ্বাস্য!
- আসলেই! এইটা হইলো বড়লোকের পোলাপানদের লদ-লদকি করার যায়গা। হাড্ডি দিয়ে তো মনে হয় ডিলডো বানানো হয় এইখানে, তাইনা? তো তুমি কার সাথে লদকাইতে আসছো?
- তোমার মুখ পুরাই নাপাক হিমু।
- তোমাদের শরীরটাই নাপাক তিতির।
মইত্যা এতোক্ষন তিতিরকে দেখছিলো। তার খুব কষ্ট লাগলো, কেনো তিতিরকে নেয়ার আগে সে ভিডীউর ব্যাবসা বন্ধ করে দিলো! ইশ, “তিতির এর ঝাল মশল্লা” ভিডিওটা বের হইলে আজকে মইত্যার নাম পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির টপ ডিরেক্টরদের সাথে থাকতো!

- হিমু ভাই।
- কি?
- তিতির আপা কি, মানে ইয়ে আর কি, মানে ……
- ইউটিউবে সার্চ দে, পাবি।
দাঁত সব বের হয়ে গেলো মইত্যার !


৩)

মাজেদা খালা ৫টায় টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের নিচে বসে ভাবতে থাকেন নতুন হিমুকে নিয়ে। এই যে এইভাবে হিমু বাড়তেই আছে, এক হিমুর যন্ত্রনাতেই তার জীবন যায় যায় প্রায়, এত্তো হিমু যে প্রোডাকশন হইতেসে, এগুলার কি হবে? প্রাইমারী অবস্থায় তো এক্সপোর্টও করা যাবেনা !
- খালা, ২০টাকা দাওতো!
- তুই? তুই এইখানে কি করিস?
- বলতেসি, আগে ২০ টাকা দাও।
- ক্যান? বেন্সন খাবি?
- হুম।
২০টাকা দিয়ে সে ১টা চিমটা কিনল। খালা কয়েক হাজার বার চিমটার কথা জিজ্ঞেস করেও কিছু বুঝলোনা, শুধু বুঝলো চিমটা দিয়ে বিচি টাইপের কিছু ১টা বের করবে।

- হিমু, ওই ছেরাটা কে?
- ওই ছেরাটা হিমু।
- তুই হিমু, ওইটাও হিমু?
- জ্বি ।
- মানে কি?
- তুমি কি হিন্দু নাকি খৃষ্টান ?
- কি বলিস! আমি ঈমান-আকীদা মান্য করা মুসলমান! আমার নাম মোসাম্মত মাজেদা খানম। বিয়ের পর মাজেদা জোয়ার্দার হয়েছে।
- তুমিও মুসলমান ওই চিতই পিঠা বানাইতেসে যে মহিলাটা, সেও মুসলমান। বুঝাতে পেরেছি?
- হুম্ম। বাসায় চল।
- কেনো? বাদল এর বৌ রাগ করেছে?
- বাদল বিয়ে করেছে এই খবর তোকে কে দিলো?
- কেউ দেয় নাই। রাগ করেছে কেন?
- এত্তো কিছু জানিস যখন এইটাও নিশ্চই জানিস !
- জানি তো। কিন্তু ওইটা তো বাদল রাত এ অন্যদিক হয়ে ঘুমায় বলে রাগ হয়েছে। তোমার কাছে কি বলেছে, রাগ করেছে কেনো?
- এ মা! বাদল বৌ কে রেখে অন্য দিক হয়ে ঘুমায়?
- শুধু তাই? ওর বৌ এক সপ্তাহ ধরে কন** কিনতে বলে তাও কিনেনা। একটা মেয়ে কতোটা বাধ্য হইলে মুখ খুলে এই কথা বলতে পারে?
- (প্রচন্ড মন খারাপ করে) হিমু, তুই চলে যা। বাসায় যাওয়া লাগবেনা। আর আমার সাথে তোর এই সব কথা হয়েছে বাদল যেনো না জানে।
- আচ্ছা। খালা, দোয়া করো আমার জন্য , ১টা অপারেশন এ নেমেছি। অপারেশন টর্চলাইট! সাক্সেস্ফুল হতেই হবে।
খালা তার প্রাডো দিয়ে চলে গেলো।

৪)

কেএফসি তে খাওয়া শেষ করেও মইত্যা হিমুকে ছাড়লোনা। সে নাকি হিমুকে ছেড়ে আজ কোত্থাও যাবেনা। আজ সারাদিন হিমুকে খাওয়াবে, রাইতে মাথায় হাত বুলায় দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে তারপর সে যাবে। হিমু সাধারনত ভয় পায়না, তবে রাতের প্ল্যান শুনে সে কিঞ্চিৎ ভয় পেলো!


৫)


আজ ৩ দিন যাবত হিমু ঘুমাতে পারছেনা। ঘুমালেই স্বপ্নে সে হিমুকে দেখে। তার মতোই তবে দাড়ি-ওয়ালা। সে খালি বলে – “ হিমু, আমাকে চিনেছো? আমি হিমু !আমাকে সাহায্য করো, আমার শক্তি বড় কম। হিমু, বিচি লাগবে, বিচি”

হিমু ঝটকা মেরে ঘুম থেকে উঠে , তার সারা শরীর ঘামে ভিজে আছে। ঘড়ি দেখে, সকাল ১২টা। এখনো মেসের বুয়া আসেনাই। বুয়া বললেও আসলে ১৩-১৪ বছরের ১টা মেয়ে। ঝাড়ু দেয় , কাপড় ধোয় আর ঘর গুছায়। আগের হিমুরা নাকি এইসব করতোনা, কিন্তু সে যে ফ্যামিলী থেকে এসেছে , তার বাবা একজন আর্মী। ছোট্টোবেলা থেকেই সেই পর্যায়ের টাইটে রেখেছেন। তাই অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে কিছুটা।

হিমু হোটেলে যাবে কিনা ভেবে গেলোনা। হোটেলে গেলেই তাকে খাশির ১টা আস্ত রান ধরায় দিবে খেতে। সে কোনো ভাবেই বুঝাতে পারবেনা যে খাশীরও এন্থ্রাক্স হয়। সে হাঁটা ধরলো, গিয়ে দেখি আজ তিতিরকে পাওয়া যায় কিনা, কেএফসি’র চিকেন খেতে ইচ্ছে করছে।

৬)

- হ্যালো
- হিমু ভাই, তুমি এইডা কি করলা? আম্মাকে কি বলসো তুমি এইসব?
- ঠিকই তো বলসি ! এখন খালা তোকে জোর করে হানিমুনে পাঠায় দিবে! আরে, পালিয়ে বিয়ে করেছিস, বউ এর সাথে একটু ইয়ে যদি না করিস তাইলে বিয়ে করলি কেনো?
- তবুও। তুমি জানোনা, আমি তোমাকে কত্তো ভালোবাসি? তুমি না বলেছ “ মহামানুষেরা কখোনো সঙ্গমে লিপ্ত হয়না”
- হ্যা। কিন্তু তুই মহামানুষ না। তো তুই সঙ্গম, পঙ্গম, বঙ্গম আরো যা যা আছে, সব কিসুতে লিপ্ত হ। রাখি।

হিমু পল্টন থানার ওসির সামনে বসে আছে। সব সময়ের মতো এইবারো তার মুখ হাসি হাসি।

- তো হিমু সাহেব, আবার কোন ঝামেলা করে আসলেন?
- কোনো ঝামেলা করিনি, তবে ঝামেলা মিটানোর খায়েশ জেগেছে।
- কাহিনী কি?
- বড়লোকের পোলাপানদের ১টা গোষ্ঠি যে রেপ করে তা পর্নের নামে ছড়িয়ে দিচ্ছে, খবর রাখেন?
- হুম, তো কি করতে পারি?
- কিছুইনা। চা খাওয়াতে পারেন।

চা’র সাথে কুকি বিস্কিট খেয়ে হিমু এসে পড়লো। দাঁতভাঙ্গা মেহেদী ওরফে মেন্দীকে ফোন দিলো।

- হ্যালো
- হিমু ভাই! শুধু কন, কার কল্লা?
- জানিনা।
- ভাই, উদাস কেন? কি হইসে? হুদা কন, মেন্দীর মতোন লাল বন্যা ভাসায় দিমু ঢাকা শহরে!
- তুমি আপাতত ৩০০ চিমটা রেডি কর।
- কইরা ফালাইসি আর কিছু ভাই?
- না, রাখি মেন্দী। পরে ফোন দিবো।




৭)


- বুঝসেন হিমু ভাই, মাইয়া মানুষ হইলো আমের লাহান। যতো টিপবেন, ততোই নরম হইবো। খাইবার ও আরাম পাইবেন। আবার ধরেন, উপরে দিয়া কি টসটইসা, খাওনের পর ছেবরা !
- হুম। মইত্যা, রেপ ভিডিও কারা বের করে জান?
- হায় হায়, কন কি ? আবুল ভাই! ওই যে, মহিলা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।
- বাহ! একদম হাতের কাছেই কাচামাল ! ব্যাবসা তো ভালো হবেই!
- ক্যান ভাই? কি হইসে? আপনার মাল লাগবো?
- না। তবে আমাকে একটু নিয়ে যাওয়া লাগবে ঐখানে।



৮)


ঘুমের মধ্যেই যেনো হিমু মরে যাবে। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। মাথা ফেটে যেনো রক্ত বের হয়ে মেন্দীর মতো ঢাকা ভেসে যাবে। খুব খারাপ স্বপ্ন দেখছে হিমু। দেখছে রুপা বিবস্ত্র হয়ে কাঁদছে। তার মুখে অজস্র শিয়াল-কুকুরের আচরের দাগ। সারা দেহ রক্তাক্ত, জায়গায় জায়গায় কেটে গেছে। কাছে গিয়ে হাত ধরলো হিমু। রুপার শরীর অসম্ভব ঠান্ডা ! রুপা বেঁচে নেই !

হিমু কোনোদিন যা করেনি, আজ তা করবে। বাবা’র আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে এতোদিন, কিন্তু মহাপুরুষ হবার বাসনায় হিমু মনুষ্যত্ব হারাতে চায়না। ক্রোধ, প্রচন্ড ক্রোধ তার উপর গেড়ে বসেছে।

- মেন্দী?
- হিমু ভাই, কন কার কল্লা?
- গুলশান যাবো।
- ধরেন আমি আপনার বাসার তলে আইসা পরসি ভাই।


গাড় অন্ধকারে হিমু হাটতে থাকে। অশরীরি কোনোকিছু যেনো তার উপর ভর করে আছে। তুমুল বৃষ্টির কিছুই তার চিন্তায় নেই। তার অতি-প্রাকৃতিক ক্ষমতা কখনো সে ব্যবহার করেনি। আজ সে করবে। হতে পারে সে মহামানব হতে পারবেনা। তবে, মানুষ হয়ে মৃত্যু দেখায় আনন্দ আছে।


৯)

ধীরে ধীরে চোখ খুলে হিমু। দেখে মইত্যা তার চোখে-মুখে পানি ছিটাচ্ছে।

- হিমু ভাই, কি ডরটা দেখাইলেন! এমন কইরা মাইনষে অজ্ঞান হয় ! অন্তত কইয়া তো লইবেন যে অজ্ঞান হইতাসি!
- মইত্যা, সময় নাই। গুলশান চলো, আবুলের বাড়িতে।
- কি কইতাসেন? আবুল ভাই রে চিনেন না হিমু ভাই। হেয় মন্ত্রী-মিনিষ্টার মানেনা। খুন কইরা এন্থ্রাক্সের গরুর মাংশ কইয়া নদীতে ভাসায় দিবো।
- যা বলসি করো।


১০)

আবুলের ফ্লাটে প্রায় ৩০০ হিমু দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সবার হাতে চিমটা। সামনে উলঙ্গ আবুল আর তার উলঙ্গ রেপিস্ট পার্টি।ক্যামেরা ম্যান ও উলঙ্গ, এইটা কেন হইলো পরে জানতে হবে।

- আপনারা যেই হন, আমি আবুল এইটা তো জানেন। সাহস দেখে অবাক হই, আমার বাড়িতে এসে আমাকে থ্রেট দাও যে বিচি কেটে ফেলবে! হাস্যকর! আর মইত্যা, তোমার ভালো দিন শেষ, বুঝে নিও।
- আবুল তুমি কোন ব্রান্ডের ভায়াগ্রা নাও? তোমার স্টামিনা তো দারূণ, এক সাথে ৩ জনকে রেপ করছো। মেশিন ও দেখি আকাশ ছোবার অপেক্ষায় !
- তা ভালোই। তোর মা-বোনকে দিয়ে যা। দেখ ওরা কি বলে !

কালো কালো র্যাবের মতো প্রায় শ’খানেক লোক মেশিনগান হাতে হিমুদের দিকে এইম করে দাঁড়িয়ে আছে।


১১)

রাজধানীতে পর্ণ ব্যাবসায়ী খুন

রাজধানীর গুলশান এলাকায় গতকাল রাতে রহস্যজনক হত্যাকান্ড ঘটে। এলাকার লোকজনের মতে মধ্যরাতে ওই বাড়ির জানালা দিয়ে অচেনা এক ধরনের মৃদূ আলোক রশ্মি বের হতে থাকে। সকালে বাড়ির কেয়ারটেকার দরজা খুলে দেখতে পান, ব্যাবসার প্রধান ব্যাক্তিত্ব আবুল কাশেম সহ আরো শ’খানেক পুরুষ সকলেই উলঙ্গ ও তাদের জননথলী থেকে বিকৃত অবস্থায় রক্তপাত ঘটছে। পুলিশ সেখান থেকে বিপুল পরিমান ভিডিও সিডি ও বেশ কিছু কর্মজ়ীবি নারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে তাদের এ রহস্যজনক মৃত্যুর ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি।

দৈনিক হায় হায় দিন , নিজস্ব স্টাফ রিপোর্টার।


১২)

মাজেদা খালা হিমুকে ফোন করেই যাচ্ছে, কিন্তু ফোন কেউ ধরছেনা। রুপার ছেলে হয়েছে এই খবরটা না দেয়া পর্যন্ত তার গ্যাস্ট্রিকের ফাপানি কমবেনা ।

মইত্যাও হিমুকে খুব মিস করে।

মিজানুর রহমান তারপর চাঁপা রানী এবার ঈশিতা- ইভটিজি এর রক্তাক্ত সাক্ষী (ছোটো গল্প)

১)


- এই বয়সে এত্তো বড় ?
- হ! আমি তো অবাক!
- জিগামু নাকি? কে হাতাইসে যে এত্তো বড় ! হা হা হা
- ডাক দে !

মুন্না আর রঞ্জু বেগম রোকেয়া গার্লস স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে। সুন্দর মেয়েদের সাথে একটু মজা নিচ্ছে। প্রতিদিন ভাত খাওয়ার মতোই রুটিন মাফিক কাজ। মুন্না মেয়েটাকে ডাক দিলো।

- এই যে আপু, একটু শুনবেন?
মেয়েটা চুপ করে মাথা নীচু করে সামনে হাটতে লাগলো।
- এই যে, একটু শুনেন। লজ্জা পাওয়ার কিছু নাইতো! আমরা তো হাতানো জিনিসে হাত দেইনা, শুধু কিভাবে এত্তো বড় হলো, একটু যদি বলে যেতেন!
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে রিপা’র। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে। এত্তোগুলো গার্জিয়ানের সামনে এইসব কথা। ছিঃ ! রিপা তারাহুরো করে একটা রিক্সা নিয়ে কাদতে কাদতে চলে গেলো।

- হ্যাহ ! কইতে পারবোনা কিন্তু করতে পারবো ! নষ্টা জানি কোথাকার!
- আরে আর কইসনা! পাশের বাসারটারে কাইল্কা কইলাম তোমার ঠোট তো চুমাইতে চুমাইতে কালো হয়ে গেসে, দাও আমি লাল বানায় দেই, সে কি কান্না! রাতে মা-বাপ আইসা হাজির! দিছি গাইল্লায়া!
- তোর বাপে না কমিশনার?
- তাইলে? বুঝে ওরা কমিশনার কি ? যখন খাইবো তখন বুঝবো!
মুন্না আর রঞ্জু আরো কিছু নীচু মানষিকতার কথা নিয়ে হাসাহাসি করে, রুটিন মাফিক আরো আধা ঘন্টা মেয়েদের ডিস্টার্ব করে বাসায় গেলো।

- আম্মা, কি করো ?
- এতক্ষন কই ছিলি?
- নোট ফটোকপি করতে গেসিলাম আম্মা! সামনে প্রি-টেস্ট না!
- খবর দেখসস? চাপাঁ রানী মহিলাটারে কেমনে মাইরা ফালাইসে! কি অবস্থা! এইসব পোলাপাইন কোন মা যে পেটে নিসে! কি হারাম খাইয়া জনম দিসিলো কে জানে!
- আরে এইসব হইলো ফকিন্নীর পুলাপান! আর মাইয়াগুলাও ভালা না আম্মা। কাপড়-চোপর ঠিক রাখবোনা, রাস্তায় পোলাগো দেখলেই রংঢং করবো। এগুলাও খারাপ। আম্মা, ২০টা টাকা দাওতো, কলম কিনা লাগবো!

মুন্না ৪টা বেনসন কিনলো। নতুন ৩টা নাম্বার পাইসে। আজকে কনফারেন্স কইরা মেয়েগুলারে জ্বালান লাগবে !

২)

রঞ্জু এখন মুগদায়। এক মেয়ের পিছা পিছে হাটতে হাটতে এসে পরেছে। রাস্তায় বেশ কয়বার কথা বলার চেষ্টা করে লাভ হয়নাই। ফোন নাম্বার চাইলেও দেয়নাই। মেয়েগুলা প্রচন্ড আনস্মার্ট! সমস্যা হইলো, এলাকার বাইরে যে আসলো, মুগদায় তার তেমন প্রতিপত্তি নাই। এখন যদি মেয়ে ভাই-টাই নিয়ে আসে, তাইলে তো ভবলীলা সাঙ্গ!

- ওই ছেলেটা ভাইয়া, ওই যে লাল শার্ট , থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরা ছেলেটা!
৬-৭টা ছেলে রঞ্জুর দিকে দৌড়ায় আসতেছে। রঞ্জুর আত্মা কেপে উঠলো, ইয়া আল্লাহ, ইয়া পরওয়ারদিগার! এই যাত্রা বাচাও!
- ওই হারামীর পুত, ওই বান্দীর পুত, দাড়া কইতাসি। তুই পালাবি কই শালা, খাড়া !
রঞ্জু দৌড়াচ্ছে, প্রানপনে দৌড়াচ্ছে। তার প্রচন্ড পিশাবের বেগ এসেছে, কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে পিশাব করার উপায় নেই! সে দৌড়াচ্ছে, তার সামনে এখন শুধুই পথ, শেষ হচ্ছেনা।







৩)

মুন্নার ফোন বেজে উঠলো। বাসা থেকে ফোন এসেছে। এই মজার টাইমে ফোন ধরার কোনো মানে হয়না!
মুন্না আর তার পরানের বন্ধু মিশা মিলে এক মেয়েকে ভয় দেখিয়ে গলিতে নিয়ে এসেছে। তাদের সাথে গলিতে না ঢুকলে রাস্তায় তাকে দিগম্বর করে দিবে, এই ভয় দেখিয়ে তাকে গলিতে এনেছে।
- এই, ওড়না আমার হাতে দে।
- ভাই, আমারে ছাইড়া দেন। আপনের পায়ে পড়ি।
- ওই মিশা, মাগীর দুই হাত চাইপ্পা ধর তো! ওয় বেশী ফট ফট করতাসে
- খোদার কসম লাগে ভাই! আমারে ছাইড়া দেন। আমার আত্মহত্যা করন ছাড়া উপায় থাকবোনা ভাই। আমারে মাফ কইরা দেন ভাই!
- চোপ! তোর লগে তখন একটু গল্প করতে চাইছিলাম তখন বহুত ভাব দেখাইসিলি। তুই ফাহাদের লগে কথা কইতে পারোস আর আমার লগে পারোস না ক্যান? ফাহাদে কেলাসে ফাস্ট হয় দেইখ্যা ? অহন দেখ , তোরে মজাটা দেখাই। মিশার বাচ্চা তোরে কি কইলাম!
- ভাই, আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর কারো লগে কথা কমুনা। আমারে ছাইড়া দেন!

আবারো মুন্নার ফোন আসলো। মিশার হাতে মেয়েটাকে ধরিয়ে একটু দূরে এসে মুন্না ফোন ধরলো।
- হ্যালো
- মুন্নারে, বাপ , তুই কই গেলি রে ............ তোর বোইন তো গলায় ফাসি দিসেরে বাপ......। ও বাপ রে ............ ও আল্লাহ .........
মুন্না আর কিছু শুনতে পেলোনা, হাত থেকে মোবাইল পরে গেলো। ছুটে গেলো বাসায়।


৪)

গনপিটুনিতে এক বখাটের মৃত্যু

গতকাল মুগদাপাড়ায় গনপিটুনিতে রঞ্জু(১৭) নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু ঘটে। এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, স্মৃতি(১৫) নামের এক মেয়ের পিছে পিছে সে এখানে আসে এবং মেয়েটাকে বারবার যৌন হয়রানী করে। এলাকাবাসী তা প্রত্যক্ষ্য করে তাকে বোঝানোর পরও সে স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে বাজে উক্তি করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে স্মৃতির বস্ত্র হরণে উদ্যত হলে এলাকাবাসীর বেদম পিটুনীতে তার উক্ত স্থলে মৃত্যু ঘটে।
দৈনিক হায় হায় দিন, স্টাফ রিপোর্টার।

( রঞ্জু মৃত্যুর আগে পিশাব করতে পারেনি। মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই তার পিশাব বের হয়ে যায়)

৫)

মুন্নার বোন, ঈশিতা ফাসি দিয়েছে। রাস্তায় আসার সময় কিছু বখাটে ছেলে তার শরীরে আপত্তিকর জায়গায় ধরাধরি করে এবং রাস্তায় তাকে লাঞ্চিত করে। সে সহ্য করতে না পেরে বাসায় এসে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে ফাসিতে ঝুলাটাকেই জীবনের শান্তিময় অধ্যায় বলে মেনে নেয়।
মুন্না বাকরুদ্ধ হয়ে পরে। যে ওড়না সে আরেক মেয়ের গলা থেকে খুলে নিয়েছিলো, সেই ওড়না আজ তার বোনের গলায় ফাসি হলো।

মুন্না বর্তমানে অপ্রকৃতস্থ। তাকে বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায় ওড়না হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে।

কালবোশেখী হৃদ্যতা


১)

রাত ২টা বেজে আটত্রিশ মিনিট। আজকের দিনটা একটু অন্যরকম, অন্যান্য দিন গুলোর থেকে একটু আলাদা। পহেলা বৈশাখের প্রথম রজনী আজ। ঘন্টা তিনেক আগে বেশ তান্ডবময় ঝড়-তুফান হয়ে গেলো। বোধ হয় কালবোশেখী। পরিবেশটা বেশ থমথমে। এতো নিরিবিলি, এতো চুপচাপ .........বাতাসটা পর্যন্ত নিঃশব্দে বয়ে যাচ্ছে। ভেজা রাতের নিস্তব্ধতাটা কেমন যেনো লাগছে।
হা করে আকশের দিকে তাকিয়ে আছে নীলিমাচোখের কোন থেকে গাল বেয়ে পানি নেমে আসছে। সে কান্নায় এতোটুকু শব্দ নেই। এমন নিস্তব্ধ পরিবেশে শব্দ করে কান্না করার সাহস নীলিমার নেই।

২)

১৪১৫ এর পয়লা বৈশাখ। নীলিমা আর তার বন্ধু-বান্ধবরা চারুকলাতে আড্ডা দিচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই মঙ্গলশোভাযাত্রা বের হলো, সবাই দৌড় দিলো! পৃথিবীর সব রঙ যেনো এই শোভা যাত্রায় এসে নিজেকে উজার করে দিয়েছে। হাজার রঙের সম্মেলন, ঢোল-ডুগডুগি আর বাঁশির শব্দ আর তার সাথে শত শত তরুন-তরুনীর সংজ্ঞাহীন উন্মাদনা – এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। নীলিমা যখন তার বান্ধবীদের সাথে নাচছিলো, তখন শাফিন যে তাকে খুব সাবধানে ঘিরে রেখেছিলো যাতে অন্য কারো সাথে ধাক্কা না খায় বা কেউ যাতে তাকে স্পর্শ না করে, সেদিকে নীলিমার খেয়াল ছিলোনা।
শাফিন আর নীলিমা একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথ ডিপার্টমেন্টে পড়াশুনা করে। শাফিন যে নীলিমার দিকে আড়চোখে তাকায় সেটা নীলিমা টের পেয়েছিলো তবে তা প্রেম পর্যন্ত যাবে কিনা সে অতো ভাবেনি।
সারাটাদিন শাফিন নীলিমার পিছেই লেগে থাকলো। কখনো পানি এনে দেয় তো কখনো চালতার আচার। আবার পাখা এনে দেয় যাতে গরম না লাগে, একটু একটু করে নীলিমা ব্যাপারটা আঁচ করতে পারে।
সারাটাদিন হাটাহাটির পরে সন্ধ্যার পর রিক্সায় করে বাড়ি ফেরার পথে শাফিন একদম চুপ করে রইলো।
-       কিরে? তোর মন খারাপ?
-       না।
-       কিছু বলবি?
-       হুম, মানে না।
-       বলে ফেল।
-       না কিছু...... ও রকম কিছু না।
-       দেখ, আজকের দিনটা খুব ভালো একটা দিন। জীবনকে নতুন ভাবে সাজানোর দিন। আমি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি, কিন্তু আমি চাই যা বলার তুই বলবি। আমি কোনোকিছু আঁচ করে বসে থাকতে চাইনা।
-       নীলু।
-       বল।
-       আমি আমার জীবনের বাকি পহেলা বৈশাখ গুলোতে তোর হাত ধরে এই রাস্তায় হাটতে চাই।
-       তোর কথা শেষ?
শাফিন চুপ করে নীচে তাকিয়ে রইলো। নীলিমা রিক্সাওয়ালাকে বললো, “ভাই, একটু থামান তো। আমি নেমে যাবো”

৩)

-       এই, তুমি এতো বিয়ে বিয়ে করো কেনো?
-       করবোনা? প্রেম করেছি কি জন্য? বিয়ে করার জন্য না?
-       এখন বিয়ে করে আমাকে রাখবা কই? খাওয়াবা কি?
-       আমরা গাছতলায় থাকবো! বাতাস খাবো। মানুষ আমাদের থেকে পানি পড়া নিতে আসবে।
-       সারাদিন খালি ফাজলামো করো ! ধ্যাত!
-       পাখি, রাগ করেনা। এই জামাটা ভালো লাগে?
-       তুমি এই জামা পরে নাচো গিয়ে যাও!
-       এই পাখি, এমন করো কেনো? সরি সরি সরি।
-       কানে ধরো
-       ধরলাম।
-       জিব বের করো
-       করলাম।
-       হুম, এই জামাটা সুন্দর।
শাফিন আর নীলিমা পয়লা বৈশাখের জন্য শপিং এ বের হয়েছে। দু বছর হলো তাদের সম্পর্কের। শাফিন ছেলেটা বড্ড বিয়েপাগলা ! সারাটাদিন খালি দিন গুনে যে পয়লা বৈশাখ আসতে কতো দেরি, সে পয়লা বৈশাখেই বিয়ে করবে! লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করাটা মন্দ না! নীলিমা খুব আলগা একটা রাগ দেখায়। সেও যে খুব খুশী এটা বুঝতে দেয়না।

৪)

সারা কমলাপুর স্টেশন জুড়ে “শুভ নববর্ষ ১৪১৮” এর ব্যানার টাঙ্গানো। নীলিমা ঘোলা চোখে হাটতে থাকে। ভেজা শরীরে তার শীত শীত করতে থাকে। রাত ৩টা ২০ এ কুমিল্লা থেকে ট্রেন আসবে। নীলিমা সেদিকে হাটতে থাকে।
নীলিমা আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে কাদছে। তার কানে শাফিনের কথাগুলো যেনো হাতুরি দিয়ে আঘাত করছে। কিভাবে এইসব বললো শাফিন? সে বাজারী মেয়ে? বিছানায় কি সে যেতে চেয়েছিলো? তার মতো সস্তা মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব না, এই কথা শোনার জন্য নীলিমা এই পয়লা বৈশাখের জন্য অপেক্ষা করেছিলো? নীলিমা ভাংগা গলায় চিৎকার করে কাদলো, কিন্তু গুমোট বাধা অন্ধকারে কোনো আওয়াজ শোনা গেলোনা।

দূরে আলো দেখা যাচ্ছেনীলিমা উঠে দাড়ালো। ওড়না দিয়ে চোখ মুছে রেললাইন ধরে হাটতে লাগলো সে। ট্রেইনের হুইসেল বাজছে। তার মঙ্গলশোভা যাত্রার ভেঁপুর কথা মনে পরলো। মনে পরে গেলো, কিভাবে শক্ত করে শাফিন তার হাত ধরে রেখেছিলো।

নীলিমা চোখ বন্ধ করলো। শেষ বিন্দুটি চোখেই রয়ে গেলো।

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১০

এর নাম কি? মিত্থা নাকি ফ্যান্টাসি?

উজ্জলের সাথে আমার পরিচয় ক্লাস ১ এ।


কিন্ডারগার্ডেন থেকে কেজিতে পড়ে , সেন্ট্রাল স্কুলে ভর্তি হলাম। তখন , সেন্ট্রাল ( মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়) স্কুলের ক্লাস ১-৩ পর্যন্ত ক্লাস হতো প্রাইমারী যে বিল্ডিংটা আছে, ( বর্তমানে ললীতকলা একাডেমী) ওইখানে। তো , প্রথম প্রথম স্কুলে আমি খুব্বি ভয়ে ভয়ে থাকতাম। কিন্ডারগার্ডেনের সেই আদর , মধুর কথা-বার্তা এখানে নাই। দিলখুশ আপার জালী বেতের বাড়ি আজো মনে পরলে পিত্তি গলে যায়। পরে, স্কুল পাশ করার পরে শুঞ্ছিলাম , দিলখুশ ম্যাডাম নাকি আমাদের ফ্রেন্ডের আপন খালা । মোদ্দা কথা, সরকারী স্কুলে প্রথম প্রথম আমার দিন-কাল সুখকর ছিলোনা।

তো , ক্লাস ১-৩ পর্যন্ত উজ্জ্বল আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। খুব গল্পবাজ ছিলো। বেশীরভাগ সময়ই গল্পটা হইতো উজ্জলের বাবা'র কি আছে না আছে, এইসব নিয়ে। ওদের যে নিজেদের ৩টা বাড়ি আর সেই বাড়ির ভিতরে গেলে যে আমার মাথা চক্কর দিয়ে ফীট হয়ে যাবো , এই ব্যাপারে উজ্জ্বল খুব্বি সতর্ক ছিলো ! তাই কখনোই ওর বাসায় যাইনি।

আমার ১টা হিস্টোরী বলি।, ক্লাস ১-১০ পর্যন্ত জীবনে আমার শুধু ১দিন বাসা থেকে টিফিন মিস গেসিলো। আর আমার টিফিন ছিলো নুডলস , পোলাও (এখন দেয়না) , পাস্তা। তখন সেই পর্যায়ের স্বাস্থ্য ছিলো বিধায়, খাবার চাহিদাও ছিলো ব্যাপক ! তো , উজ্জ্বল বরাবরের মতোই ওর বাড়ির গল্প করতো আর আমার টিফিন গপাগপ সাবার করতো। এই ৩ বছরে আমি মনে হয় আমার টিফিন চেখেও দেখতে পারিনাই।

একদিন আমাকে উজ্জ্বল বলে , "দোস্ত, আমার প্রচন্ড পাতলা পায়খানা। আজকে আম্মা টাকা দেয়নাই। তুই টিফিন আঞ্ছিস না? আমারে দিস তো !"  আমি খুব অবাক হইসিলাম, কারন পাতলা পায়খানার জন্য লাগবে স্যালাইন ! পোলাও খাইলে তো আরো ইয়ে হয়ে যাবে ! কিন্তু, ওর ব্যাকুল আবেদন আমি ফালাইতে পারিনি। :(

আমার বড়খালার বাসা গোড়ান। ক্লাস ৪ এর প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পর, খালার বাসায় বেরাইতে গিয়েছিলাম। তখন রাস্তায় উজ্জলের সাথে দেখা। ওকে দেখলাম, আমাকে দেখে রাস্তায় দৌরাইতেসে !! খুব অবাক হলাম !!! খালা আমাকে বললো " তুমি ওই ছেলেটাকে চেনো ?" । বললাম " আমার সাথে পড়ে, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড" ( ফ্রেন্ডই তো ১টা, বেস্ট না হয়ে উপায় আছে ওই বয়সে?)

এরপর খলা যা বললো, শুধু অবাক হলাম শুনে ! উজ্জলের বাবা ১ জন সিএনজি চালক। সিএনজি গ্যারেজেই ওদের বাসা। আমি খালাকে বলতেও পারলাম না উজ্জ্বল আমাকে কি বলেছে ওর সম্পর্কে ! আমি কোনোদিন ওর বাবা , ওর বাসা সম্পর্কে কিচ্ছুই জিজ্ঞাসা করিনি। কিন্তু, ৭-৯ বছরের বয়সের ১টা বাচ্চার এরকম মিত্থ্যা কথার কারণ কি?

আদৌ কি সেগুলো মিত্থ্যা? নাকি এগুলোকেই বলে ফ্যান্টাসি ? নিজেকে সবার মাঝে থেকে হারিয়ে যেতে না দেবার জন্যই তো এই মিত্থ্যে ! খুব ছোটো বয়সেই উজ্জ্বল বুঝতে পেরেছিলো সমাজের সংকীর্ণতাকে , সমাজের গড়ে উঠা নিষ্ঠুর ,নিকৃষ্ট বর্বরতাকে।

ম্যাচিউরিটির খোঁজে ...............

আমি ১জন ইম্যাচিউর বালক ............ আমি কেন ইম্যাচিউর? কারণ কেউ কেউ বলেছে, তাই! আচ্ছা, যারা যারা ইম্যাচিউর ভাবে, তারা যে ম্যাচিউর, এটা তারা কিভাবে জানলো? তাদেরও কি কেউ বলেছে , নাকি তারা নিজেরাই উপলব্ধি করেছে? যদি তারা নিজেরা উপলব্ধি করে থাকে, তাহলে আমাকে কেনো উপলব্ধি করার পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে , জোর করে বুঝানোর চেষ্টা করা হলো যে আমি ইম্যাচিউর? এই যে আমি বুঝতে পারছিনা কেনো আমাকে জোর করা হলো , হতে পারে, এইটাও ইম্যাচিউর হবার পিছনে ১টা উৎকৃষ্ট কারণ !

ম্যাচিউরিটি কি তাহলে বয়সের সাথে সমানুপাতিক ? বয়স বাড়লে ম্যাচিউরিটি বৃদ্ধি পাবে নয়তো নয় ? তাহলে যে বৃদ্ধ ব্যক্তিরা অনেক সময় বিছানা নোংরা করে ফেলে , তার পিছনে ম্যাচুরিটির ভুমিকা কতোটুকু? এ ক্ষেত্রে অনেকে বলবে যে - " আহহা ! এটা তো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার জন্য এমন করেছে"। তাহলে কি বয়স বৃদ্ধি পেলে ম্যাচিউরিটি থাকেনা? নাকি , বিছানা নোংরা করাটা ম্যাচিউরিটি ?

এই যে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছি , ইহা সম্পুর্নই প্রমান করে যে , আমি ইম্যাচিউর। এইবার কেউ বলেনি, আমি নিজেই অনুমান করে নিলাম, কারণ অধিকাংশ মানুষই প্রলাপ বকেনা, আমি বকছি ! তার মানে, আমি ইম্যাচিউর ।

১টা জিনিষ বোঝা গেলো , বেশীরভাগ মানুষ যা করে , তাই ম্যাচিউরিটি। কথাটা কি ঠিক? আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের এখন প্রধান খাদ্য রাজনৈতিক তর্ক !! এখন আমি যদি সেই সুখাদ্য ( !!! ) গলধঃকরন না করে , ফেইসবুক কিংবা ব্লগে কিছুক্ষন সময় কাটাই , তাহলেও কি আমি ইম্যাচিউর?

তাহলে ম্যাচিউরিটি জিনিষটা কি ? ইম্যাচিউর হওয়া সত্ত্বেও আমার যা মনে হয় - "১টা ছেলে/মেয়ে যখন কোন কাজে হাত দেয় , কাজটার ২টি ফলাফল , অর্থাৎ ভালো এবং খারাপ ২টা দিকই বুঝতে পারে , মন্দ দিকটিকে প্রতিহত করে নিজেকে সৎ ভাবে , সৎ পথে চালিয়ে নেয় , হোক সে সফল বা বিফল , সে একজন ম্যাচিউর " । এটা আমার মতামত , সত্যিকারের ম্যাচিউর লোকজন কি মনে করে, আমি জানিনা ।

আমি জানি , আমার এই লিখা ধৈর্য্য ধরে পড়ার মানুষ খুব্বি কম ! অনেকে হয়তো গাল পারতে পারে এই ভেবে - " কি আমার ব্লগার! পাকনামি শুরু করসে "। আসলে, মানুষের ম্যাচিউরিটি লেভেল এখন অনেক বেশী ! তারা বুঝে এই গল্পটা পড়ে আমার ২ পয়সা বাদ দেন, ১টা ফুটা পয়সারও লাভ নাই । তারা তখন ব্যস্ত ভঙ্গীতে কাজে মনোনিবেশ করবে । লেখাটা শেষ করে দেই। শুধু কিছু প্রশ্ন মনে রয়ে গেছে , " ম্যাচিউরিটি কি ? আপনি কি জানেন? জানলে, আপনি কি ম্যাচিউর? কিভাবে বুঝলেন যে আপনি ম্যাচিউর?........."

সবাইকে ম্যাচিউর হবার শুভ কামনায় , বিদায় !