মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১০

এর নাম কি? মিত্থা নাকি ফ্যান্টাসি?

উজ্জলের সাথে আমার পরিচয় ক্লাস ১ এ।


কিন্ডারগার্ডেন থেকে কেজিতে পড়ে , সেন্ট্রাল স্কুলে ভর্তি হলাম। তখন , সেন্ট্রাল ( মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়) স্কুলের ক্লাস ১-৩ পর্যন্ত ক্লাস হতো প্রাইমারী যে বিল্ডিংটা আছে, ( বর্তমানে ললীতকলা একাডেমী) ওইখানে। তো , প্রথম প্রথম স্কুলে আমি খুব্বি ভয়ে ভয়ে থাকতাম। কিন্ডারগার্ডেনের সেই আদর , মধুর কথা-বার্তা এখানে নাই। দিলখুশ আপার জালী বেতের বাড়ি আজো মনে পরলে পিত্তি গলে যায়। পরে, স্কুল পাশ করার পরে শুঞ্ছিলাম , দিলখুশ ম্যাডাম নাকি আমাদের ফ্রেন্ডের আপন খালা । মোদ্দা কথা, সরকারী স্কুলে প্রথম প্রথম আমার দিন-কাল সুখকর ছিলোনা।

তো , ক্লাস ১-৩ পর্যন্ত উজ্জ্বল আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। খুব গল্পবাজ ছিলো। বেশীরভাগ সময়ই গল্পটা হইতো উজ্জলের বাবা'র কি আছে না আছে, এইসব নিয়ে। ওদের যে নিজেদের ৩টা বাড়ি আর সেই বাড়ির ভিতরে গেলে যে আমার মাথা চক্কর দিয়ে ফীট হয়ে যাবো , এই ব্যাপারে উজ্জ্বল খুব্বি সতর্ক ছিলো ! তাই কখনোই ওর বাসায় যাইনি।

আমার ১টা হিস্টোরী বলি।, ক্লাস ১-১০ পর্যন্ত জীবনে আমার শুধু ১দিন বাসা থেকে টিফিন মিস গেসিলো। আর আমার টিফিন ছিলো নুডলস , পোলাও (এখন দেয়না) , পাস্তা। তখন সেই পর্যায়ের স্বাস্থ্য ছিলো বিধায়, খাবার চাহিদাও ছিলো ব্যাপক ! তো , উজ্জ্বল বরাবরের মতোই ওর বাড়ির গল্প করতো আর আমার টিফিন গপাগপ সাবার করতো। এই ৩ বছরে আমি মনে হয় আমার টিফিন চেখেও দেখতে পারিনাই।

একদিন আমাকে উজ্জ্বল বলে , "দোস্ত, আমার প্রচন্ড পাতলা পায়খানা। আজকে আম্মা টাকা দেয়নাই। তুই টিফিন আঞ্ছিস না? আমারে দিস তো !"  আমি খুব অবাক হইসিলাম, কারন পাতলা পায়খানার জন্য লাগবে স্যালাইন ! পোলাও খাইলে তো আরো ইয়ে হয়ে যাবে ! কিন্তু, ওর ব্যাকুল আবেদন আমি ফালাইতে পারিনি। :(

আমার বড়খালার বাসা গোড়ান। ক্লাস ৪ এর প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পর, খালার বাসায় বেরাইতে গিয়েছিলাম। তখন রাস্তায় উজ্জলের সাথে দেখা। ওকে দেখলাম, আমাকে দেখে রাস্তায় দৌরাইতেসে !! খুব অবাক হলাম !!! খালা আমাকে বললো " তুমি ওই ছেলেটাকে চেনো ?" । বললাম " আমার সাথে পড়ে, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড" ( ফ্রেন্ডই তো ১টা, বেস্ট না হয়ে উপায় আছে ওই বয়সে?)

এরপর খলা যা বললো, শুধু অবাক হলাম শুনে ! উজ্জলের বাবা ১ জন সিএনজি চালক। সিএনজি গ্যারেজেই ওদের বাসা। আমি খালাকে বলতেও পারলাম না উজ্জ্বল আমাকে কি বলেছে ওর সম্পর্কে ! আমি কোনোদিন ওর বাবা , ওর বাসা সম্পর্কে কিচ্ছুই জিজ্ঞাসা করিনি। কিন্তু, ৭-৯ বছরের বয়সের ১টা বাচ্চার এরকম মিত্থ্যা কথার কারণ কি?

আদৌ কি সেগুলো মিত্থ্যা? নাকি এগুলোকেই বলে ফ্যান্টাসি ? নিজেকে সবার মাঝে থেকে হারিয়ে যেতে না দেবার জন্যই তো এই মিত্থ্যে ! খুব ছোটো বয়সেই উজ্জ্বল বুঝতে পেরেছিলো সমাজের সংকীর্ণতাকে , সমাজের গড়ে উঠা নিষ্ঠুর ,নিকৃষ্ট বর্বরতাকে।

ম্যাচিউরিটির খোঁজে ...............

আমি ১জন ইম্যাচিউর বালক ............ আমি কেন ইম্যাচিউর? কারণ কেউ কেউ বলেছে, তাই! আচ্ছা, যারা যারা ইম্যাচিউর ভাবে, তারা যে ম্যাচিউর, এটা তারা কিভাবে জানলো? তাদেরও কি কেউ বলেছে , নাকি তারা নিজেরাই উপলব্ধি করেছে? যদি তারা নিজেরা উপলব্ধি করে থাকে, তাহলে আমাকে কেনো উপলব্ধি করার পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে , জোর করে বুঝানোর চেষ্টা করা হলো যে আমি ইম্যাচিউর? এই যে আমি বুঝতে পারছিনা কেনো আমাকে জোর করা হলো , হতে পারে, এইটাও ইম্যাচিউর হবার পিছনে ১টা উৎকৃষ্ট কারণ !

ম্যাচিউরিটি কি তাহলে বয়সের সাথে সমানুপাতিক ? বয়স বাড়লে ম্যাচিউরিটি বৃদ্ধি পাবে নয়তো নয় ? তাহলে যে বৃদ্ধ ব্যক্তিরা অনেক সময় বিছানা নোংরা করে ফেলে , তার পিছনে ম্যাচুরিটির ভুমিকা কতোটুকু? এ ক্ষেত্রে অনেকে বলবে যে - " আহহা ! এটা তো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার জন্য এমন করেছে"। তাহলে কি বয়স বৃদ্ধি পেলে ম্যাচিউরিটি থাকেনা? নাকি , বিছানা নোংরা করাটা ম্যাচিউরিটি ?

এই যে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছি , ইহা সম্পুর্নই প্রমান করে যে , আমি ইম্যাচিউর। এইবার কেউ বলেনি, আমি নিজেই অনুমান করে নিলাম, কারণ অধিকাংশ মানুষই প্রলাপ বকেনা, আমি বকছি ! তার মানে, আমি ইম্যাচিউর ।

১টা জিনিষ বোঝা গেলো , বেশীরভাগ মানুষ যা করে , তাই ম্যাচিউরিটি। কথাটা কি ঠিক? আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের এখন প্রধান খাদ্য রাজনৈতিক তর্ক !! এখন আমি যদি সেই সুখাদ্য ( !!! ) গলধঃকরন না করে , ফেইসবুক কিংবা ব্লগে কিছুক্ষন সময় কাটাই , তাহলেও কি আমি ইম্যাচিউর?

তাহলে ম্যাচিউরিটি জিনিষটা কি ? ইম্যাচিউর হওয়া সত্ত্বেও আমার যা মনে হয় - "১টা ছেলে/মেয়ে যখন কোন কাজে হাত দেয় , কাজটার ২টি ফলাফল , অর্থাৎ ভালো এবং খারাপ ২টা দিকই বুঝতে পারে , মন্দ দিকটিকে প্রতিহত করে নিজেকে সৎ ভাবে , সৎ পথে চালিয়ে নেয় , হোক সে সফল বা বিফল , সে একজন ম্যাচিউর " । এটা আমার মতামত , সত্যিকারের ম্যাচিউর লোকজন কি মনে করে, আমি জানিনা ।

আমি জানি , আমার এই লিখা ধৈর্য্য ধরে পড়ার মানুষ খুব্বি কম ! অনেকে হয়তো গাল পারতে পারে এই ভেবে - " কি আমার ব্লগার! পাকনামি শুরু করসে "। আসলে, মানুষের ম্যাচিউরিটি লেভেল এখন অনেক বেশী ! তারা বুঝে এই গল্পটা পড়ে আমার ২ পয়সা বাদ দেন, ১টা ফুটা পয়সারও লাভ নাই । তারা তখন ব্যস্ত ভঙ্গীতে কাজে মনোনিবেশ করবে । লেখাটা শেষ করে দেই। শুধু কিছু প্রশ্ন মনে রয়ে গেছে , " ম্যাচিউরিটি কি ? আপনি কি জানেন? জানলে, আপনি কি ম্যাচিউর? কিভাবে বুঝলেন যে আপনি ম্যাচিউর?........."

সবাইকে ম্যাচিউর হবার শুভ কামনায় , বিদায় !